Sunday, February 24, 2019

প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect in Bangla)

প্লাসিবো ইফেক্ট

Placebo Effect in Bangla

মানব মস্তিষ্কের অন্যতম বিভ্রান্তিকর আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফলে এমন ঘটনা ঘটে যা পারতপক্ষে অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু এই প্লাসিবো ইফেক্ট আসলে কি?

প্লাসিবো ইফেক্ট কি


প্লাসিবো ইফেক্ট হল একটি ঘটনা যা এখনো সম্পূর্ণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নি। যখন কোন বাহ্যিক বা ভৌত কারন ছাড়া শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে কোন বিশেষ শারীরিক ঘটনা ঘটে তখন তাকে প্লাসিবো ইফেক্ট ঘটে। কি? বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? এই লেখার পরবর্তী অংশগুলোতে বুঝতে পারবেন।

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট সবচেয়ে বিষ্ময়কর সৃষ্টি হল মানুষ। আর মানুষের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মস্তিষ্ক। এই জলজ্যান্ত সুপার কম্পিউটার টি আমাদের দেহ তথা সমগ্র কিছু নিয়ন্ত্রন করছে। অথচ এই মস্তিষ্ক যে কত বিষ্ময়কর তা আমরা জানিই না। এমনকি হয়ত আমরা জানিও না যে মস্তিষ্কের কতটুকু অংশ আমরা ব্যবহার করছি!
মস্তিষ্কের এক অদ্ভুত আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect)। এ বিষয়ে  ডা.জো ডিসপেঞ্জার  (Dr. Joe Dispenza)এর লেখা “ইউ আর দ্য প্লাসিবো” ("You Are the PLACEBO") একটি বই রয়েছে। এখানে তিনি সুন্দরভাবে প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফল ব্যাখ্যা করেছেন।


২১ বছর বয়সে লেখকের এক দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ভেঙে যায়। অনেক ডাক্তার দেখানোর পর ও সব ডাক্তার ই উনাকে জানান যে বাকি জীবন লেখককে হুইলচেয়ার নিয়ে চলতে হবে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না। তিনি সর্বদাই মনে মনে ভাবতেন যে উনার কিছুই হয় নি; দুর্ঘটনার কোন প্রভাব পরে নি উনার উপর। এভাবে দীর্ঘদিন ভাবতে ভাবতে তিনি লক্ষ্য করেন যে উনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এবং ক্রমেই তিনি পূর্বের মত সুস্থ হয়ে উঠেন! যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক রহস্য!
এখন কথা হল যে, তিনি কিভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন? উপরের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের শরীরের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কে দেহের মনোজাগতিক অবস্থা প্রভাবিত করে। এই প্রভাব ই হল প্লাসিবো ইফেক্ট। এরকম প্রভাব আর তার ফল আরো পরিলক্ষিত হয়েছে পূর্বে!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে অনেক মার্কিন সৈন্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাই চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার করতে হত অনেকের ই। সে সময় এত অস্ত্রোপচার করতে হত যে এক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার এ ব্যবহৃত এনেস্থিসিয়ার (চেতনানাশক) অভাব দেখা দিল। তখন অস্ত্রোপচার না করলে সেনাসদস্য মারা যেতে পারতেন। এ অবস্থায় ডাক্তারেরা ইঞ্জেকশনে পানি ভরে তা রোগীদের দেহে ব্যবহার করতে থাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে। কিন্তু সৈন্যেরা তো ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া ই দেয়া হচ্ছে! কিন্তু বিষ্ময়করভাবে দেখা গেল, সে ব্যবহৃত পানিই আহতদের গায়ে এনেস্থেসিয়ার মত কাজ করল!

এখন এটি কিভাবে হল?
আহত সকলে ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া দেয়া হয়েছে। তাই তাদের মস্তিষ্ক সংকেত পাঠায় দেহকে যে এখন অবশ হয়ে যেতে হবে। যার কারনে সে পানিই এনেস্থেসিয়ার কাজ করছে! অর্থাৎ আমরা যদি কোন জিনিস বিশ্বাস করত্র পারি, তাহলে আমরা সে অনুসারে কাজও করতে পারি।
অর্থাৎ, যদি আমরা সর্বদা আশাবাদী ভাবনা মাথায় রাখি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখি তাহলে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বেড়ে যায়। আর যদি সর্বদা হতাশাবাদী হয়ে থাকি, ব্যর্থতা নিয়ে ভাবি আমাদের মনস্তত্ত্ব সে ক্ষেত্রে ভাল ফলের প্রচেষ্টা নাও করতে পারে।
ঠিক যেমন সার্কাসের হাতি। সচরাচর সার্কাসে ব্যবহারের জন্য বাচ্চা হাতি নিয়ে আসা হয়। পরে এটি বড় হলে তখনও ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বাচ্চা হাতিকে লোহার শিকলের সাহায্যে বেধে রাখা হয় যাতে এটি পালিয়ে না যায়। আর চেষ্টা করলেও হাতিটি পালাতে পারে না কারন শিকল তার চেয়ে শক্ত। কিন্তু এই হাতিই বড় হয়ে গেলেও সেই একই শিকল সে ভাঙতে পারে না। কারন হল এই প্লাসিবো ইফেক্ট

সে সারা জীবন ভেবে আসছে যে এই শিকল ভাঙা সম্ভব নয়। তাই বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠলেও শিকল ভাঙা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অথচ বিশালাকার হাতির শক্তির সামনে সেই শিকল কিছুই না।
এভাবেই বিশ্বাস ও মনস্তাত্ত্বিক জোরে আমরা অনেক অসাধ্য ও সাধন করতে পারি। তেমন ই অনেক সহজ কাজ ও হাতছাড়া করতে পারি। তাই নিজের উপর বিশ্বাস ও লক্ষ্যে নজর রেখে তা অর্জনের চেষ্টাই এনে দিতে পারে সফলতা।

No comments:

Post a Comment