Tuesday, February 26, 2019

ইলুমিনাতি কি? (What is Illuminati)

ইলুমিনাতি কি?

(What is Illuminati?)

"ইলুমিনাতি" হলে অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি সংঘটন যার সংশ্লিষ্টতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রহস্যজনক বিষয়ে দাবী করা হয়েছে।

ইলুমিনাতি কথাটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। মূলত বিভিন্ন conspiracy theory বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে এই সংঘঠনটির সম্পৃক্ততা ধারনা করা হয়। এই সংঘটনটি মূলত লুসিফার (Lucifer),  শয়তান/দৈত্য (Satan) এর অনুগত। উল্লেখ্য, এই সকল নাম বা তথ্যই খ্রিষ্টীয় পুরানের সাথে সম্পৃক্ত।

অনেকের মতে, যে সব ব্যক্তি বা তারকারা খুব কম সময়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন, তারা ইলুমিনাতির সদস্য। ইলুমিনাতির সদস্য হওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের আত্নাকে শয়তানকে সমর্পিত করা! এছাড়া আরো নানা রহস্যকর তথ্য প্রচলিত রয়েছে ইলুমিনাতি সম্পর্কে।

কিভাবে শুরু

১ মে ১৭৭৬ ব্যাভেরিয়া (Bavaria)জার্মানি।

এডাম উইশপ্ট (Adam Weishaupt) একটি গুপ্ত সমাজ বা Secret Society বানান যার উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তিবাদী চিন্তার মঞ্চ তৈরী করা। যার নাম ছিল The Order of Illuminati। মানুষ ভাবত এই সমাজের সদস্যরা বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী (Enlightened) যাদের উদ্দেশ্য ছিল নতুন ক্রমের বিশ্ব (New World Order) তৈরি করা। যাতে তারা পৃথিবীতে শাসন করতে পারে। 


ইলুমিনাতি স্থাপনের বেশ কিছু উদ্দেশ্য ছিল।


সেই সাথে বিভিন্ন দর্শন ও ছিল ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠার পিছে।


কথিত আছে তারা এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে কোন পর্যায়ে যেতে পারত। হোক না কালোজাদু (Black magic) বা অন্য কোন অনৈতিক পন্থা। এরা বিশ্ব শাসন করতে চেয়েছিল কিন্তু সব কাজ অত্যন্ত লুকিয়ে (Secretly) করত।
তাদের যে প্রতীক রয়েছে, তাতে একটি চোখ দেখা যায়।  যা লুসিফার (Lucifer) এর চোখ নামে কথিত।


উল্লেখ্য লুসিফার হল শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত। ইলুমিনাতি এর সদস্য রা বিশ্বাস করে লুসিফার বিশ্বে চলমান সবকিছু দেখছে। কিন্তু কিছু সময় পর চার্লস থিওডর (Charles Theodore) যিনি নতুন শাসক ছিলেন তিনি ১৭৮৫ সালে এই গুপ্ত সমাজ (Secret Society) কে বন্ধ করে দেন। কারন তিনি তৎকালীন ইলুমিনাতি এর জনপ্রিয়তা দেখে চিন্তিত ছিলেন। উনার আশংকা ছিল এই ইলুমিনাতি এর জনপ্রিয়তা পরবর্তীতে যেন উনার শাসনের উৎখাতের কারন না হয়ে যায়।

এরপর এই গ্রুপের কি হল কেউ জানে না। সেই সময় প্রায় ২০০০ মানুষ এই গ্রুপের সদস্য ছিল। উৎখাতের পর হঠাৎ এই মানুষগুলোর কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।
এরপর ই ধারনা করা হয় এই মানুষগুলো বেচে আছে এবং বংশ পরম্পরায় ইলুমিনাতি -র আদর্শ বয়ে নিচ্ছে।

১৯২০ এর দশকে ফ্যাসিবাদীরা বিশ্বাস করতে যে ইহুদী দের একটি দল বা গ্রুপ হল ইলুমিনাতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কমিউনিজমের এর বিরোধীরা বিশ্বাস করত যে কমিউনিস্ট দের একটি দল হল ইলুমিনাতি।আর বর্তমানে ইলুমিনাতি বিষয়ক ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা (Illuminati Conspiracy Theorists) বিশ্বাস করে যে, ইলুমিনাতিরা New World Order এর অংশ!  

অনেকের মতে ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য হল One World Order প্রতিষ্ঠা। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী একটি মাত্র সরকার সচল থাকবে। বর্তমানে যেমন একেক দেশে একেক সরকার- এমন না হয়ে সমগ্র বিশ্ব এক ও অভিন্ন সরকারের অন্তর্গত হবে। যা হল New World Order এর মূলকথা। জর্জ এইচ ডব্লু বুশ, জন এফ কেনেডি প্রমুখের মত অনেক বিশ্বপরিচিত ও ক্ষমতাধর ব্যাক্তিরা অনেক বার New World Order কথাটি উচ্চারন করেছেন।

অনেক Conspiracy Theory অনুসারে বিশ্বের সব শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সকলেই ইলুমিনাতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেই সাথে অনেক ব্যাখ্যাতীত ঘটনার পিছেও ইলুমিনাতির যোগসূত্র সন্দেহ করা হয়।

এছাড়া অনেক তারকা অভিনেতা বা গায়কদের ও ইলুমিনাতির অনুসারী বলে ধরা হয়। এটি মূলত তাদের পোষাক এবং বিভিন্ন সময় তাদের দেখানো চিহ্ন দিয়ে ধারবা করা হয়। হাত দিয়ে ত্রিভুজ দেখানোকে প্রথাগতভাবে ইলুমিনাতির প্রতীকের পিরামিড ভাবা হয়।


যদিও ইলুমিনাতির অস্তিত্ব বর্তমানে আছে কিনা এ সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে। সে সাথে রয়েছে আরো অনেক রহস্যজনক ঘটনা যেখানে অনেকেই ইলুমিনাতির সম্পৃক্ততা দাবী করে। এরকম কিছুই থাকছে পরবর্তী ব্লগ গুলোতে।

Sunday, February 24, 2019

প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect in Bangla)

প্লাসিবো ইফেক্ট

Placebo Effect in Bangla

মানব মস্তিষ্কের অন্যতম বিভ্রান্তিকর আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফলে এমন ঘটনা ঘটে যা পারতপক্ষে অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু এই প্লাসিবো ইফেক্ট আসলে কি?

প্লাসিবো ইফেক্ট কি


প্লাসিবো ইফেক্ট হল একটি ঘটনা যা এখনো সম্পূর্ণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নি। যখন কোন বাহ্যিক বা ভৌত কারন ছাড়া শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে কোন বিশেষ শারীরিক ঘটনা ঘটে তখন তাকে প্লাসিবো ইফেক্ট ঘটে। কি? বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? এই লেখার পরবর্তী অংশগুলোতে বুঝতে পারবেন।

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট সবচেয়ে বিষ্ময়কর সৃষ্টি হল মানুষ। আর মানুষের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মস্তিষ্ক। এই জলজ্যান্ত সুপার কম্পিউটার টি আমাদের দেহ তথা সমগ্র কিছু নিয়ন্ত্রন করছে। অথচ এই মস্তিষ্ক যে কত বিষ্ময়কর তা আমরা জানিই না। এমনকি হয়ত আমরা জানিও না যে মস্তিষ্কের কতটুকু অংশ আমরা ব্যবহার করছি!
মস্তিষ্কের এক অদ্ভুত আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect)। এ বিষয়ে  ডা.জো ডিসপেঞ্জার  (Dr. Joe Dispenza)এর লেখা “ইউ আর দ্য প্লাসিবো” ("You Are the PLACEBO") একটি বই রয়েছে। এখানে তিনি সুন্দরভাবে প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফল ব্যাখ্যা করেছেন।


২১ বছর বয়সে লেখকের এক দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ভেঙে যায়। অনেক ডাক্তার দেখানোর পর ও সব ডাক্তার ই উনাকে জানান যে বাকি জীবন লেখককে হুইলচেয়ার নিয়ে চলতে হবে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না। তিনি সর্বদাই মনে মনে ভাবতেন যে উনার কিছুই হয় নি; দুর্ঘটনার কোন প্রভাব পরে নি উনার উপর। এভাবে দীর্ঘদিন ভাবতে ভাবতে তিনি লক্ষ্য করেন যে উনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এবং ক্রমেই তিনি পূর্বের মত সুস্থ হয়ে উঠেন! যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক রহস্য!
এখন কথা হল যে, তিনি কিভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন? উপরের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের শরীরের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কে দেহের মনোজাগতিক অবস্থা প্রভাবিত করে। এই প্রভাব ই হল প্লাসিবো ইফেক্ট। এরকম প্রভাব আর তার ফল আরো পরিলক্ষিত হয়েছে পূর্বে!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে অনেক মার্কিন সৈন্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাই চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার করতে হত অনেকের ই। সে সময় এত অস্ত্রোপচার করতে হত যে এক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার এ ব্যবহৃত এনেস্থিসিয়ার (চেতনানাশক) অভাব দেখা দিল। তখন অস্ত্রোপচার না করলে সেনাসদস্য মারা যেতে পারতেন। এ অবস্থায় ডাক্তারেরা ইঞ্জেকশনে পানি ভরে তা রোগীদের দেহে ব্যবহার করতে থাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে। কিন্তু সৈন্যেরা তো ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া ই দেয়া হচ্ছে! কিন্তু বিষ্ময়করভাবে দেখা গেল, সে ব্যবহৃত পানিই আহতদের গায়ে এনেস্থেসিয়ার মত কাজ করল!

এখন এটি কিভাবে হল?
আহত সকলে ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া দেয়া হয়েছে। তাই তাদের মস্তিষ্ক সংকেত পাঠায় দেহকে যে এখন অবশ হয়ে যেতে হবে। যার কারনে সে পানিই এনেস্থেসিয়ার কাজ করছে! অর্থাৎ আমরা যদি কোন জিনিস বিশ্বাস করত্র পারি, তাহলে আমরা সে অনুসারে কাজও করতে পারি।
অর্থাৎ, যদি আমরা সর্বদা আশাবাদী ভাবনা মাথায় রাখি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখি তাহলে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বেড়ে যায়। আর যদি সর্বদা হতাশাবাদী হয়ে থাকি, ব্যর্থতা নিয়ে ভাবি আমাদের মনস্তত্ত্ব সে ক্ষেত্রে ভাল ফলের প্রচেষ্টা নাও করতে পারে।
ঠিক যেমন সার্কাসের হাতি। সচরাচর সার্কাসে ব্যবহারের জন্য বাচ্চা হাতি নিয়ে আসা হয়। পরে এটি বড় হলে তখনও ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বাচ্চা হাতিকে লোহার শিকলের সাহায্যে বেধে রাখা হয় যাতে এটি পালিয়ে না যায়। আর চেষ্টা করলেও হাতিটি পালাতে পারে না কারন শিকল তার চেয়ে শক্ত। কিন্তু এই হাতিই বড় হয়ে গেলেও সেই একই শিকল সে ভাঙতে পারে না। কারন হল এই প্লাসিবো ইফেক্ট

সে সারা জীবন ভেবে আসছে যে এই শিকল ভাঙা সম্ভব নয়। তাই বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠলেও শিকল ভাঙা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অথচ বিশালাকার হাতির শক্তির সামনে সেই শিকল কিছুই না।
এভাবেই বিশ্বাস ও মনস্তাত্ত্বিক জোরে আমরা অনেক অসাধ্য ও সাধন করতে পারি। তেমন ই অনেক সহজ কাজ ও হাতছাড়া করতে পারি। তাই নিজের উপর বিশ্বাস ও লক্ষ্যে নজর রেখে তা অর্জনের চেষ্টাই এনে দিতে পারে সফলতা।

Monday, February 18, 2019

বাটারফ্লাই ইফেক্ট (Butterfly Effect in Bangla)

বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect)


আপনি কি জানেন, যে আপনি ভেনিজুয়েলা তে বসবাসরত নিকোলাস মাদুরোর সাথে সম্পর্কযুক্ত? অথবা, ব্রাজিলের নেইমারের পার্ফরমেন্স এর উপর আপনার বাবার প্রভাব রয়েছে?
আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। উপরের ঘটনাগুলো কাল্পনিক। কিন্তু এ কথা ১০০ ভাগ সত্য যে এই পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের কাজ দ্বারা কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত। এই তত্ত্বটি হলো, “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা “Theory of Chaos” , যার একটি ফল হল  বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect). 


এই তত্ত্বটির ভিত্তি হল: যে কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ, কোন ঘটনার শেষ পরিনতিকে বা ফলাফলকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করতে পারে। “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা “Theory of Chaos” নিয়ে ১৮৮০-র দশকে প্রথম কোন ধারনা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন মার্কিন গণিতবিদ এডওয়ার্ড নর্টন লরেঞ্জ (Edward Norton Lorenz).



উনি গাণিতিকভাবে দেখান যে, বিশ্বের যে কোন তরঙ্গকে সামান্য পরিবর্তন করা হলে সেই পরিবর্তন বিশ্বের অন্য সকল তরঙ্গ কে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করে। এ বিষয়টি তরঙ্গের উপরিপাতন (Superposition of wave) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন যে, ব্রাজিলে কোন প্রজাপতি পাখা ঝাপটালে তার ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে হারিকেন হতে পারে! তিনি প্রকৃতভাবে বোঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন ক্ষুদ্র কাজের পরিণতি অনেক বড়ও হতে পারে।




বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ছোট ছোট বা আপাতভাবে গুরুত্বহীন মনে হওয়া কাজ ও কোন ফলাফলকে বিশেষভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে।


১. ভুল দয়া (Wrong Mercy)


বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর সবচয়ে জনপ্রিয় উদাহরন এটি। ২৮ সেপ্টেম্বর,১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সেদিন জার্মানি ও ব্রিটেনের মুখোমুখি যুদ্ধের এক পর্যায়ে হেনরি টেন্ডেন নামের এক ব্রিটিশ সেনার বন্দুকের নিশানায় এক আহত জার্মান সৈনিক এসে পড়ে। হেনরি চাইলে সেই সৈন্যকে গুলি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি দয়া করেন সেই সৈন্যের উপর। সেই দয়াগ্রস্থ সৈন্যটিকে আজ আমরা এডলফ হিটলার নামে জানি! সেই ব্রিটিশ সৈন্য সেদিন দয়া না দেখালে কি হত কেউ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি হত? পারমানবিক বোমা কি আবিষ্কার হত? কোন প্রশ্নের ই উত্তর পাওয়া যায় না, যাবেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই পুরো বিশ্বে অনেক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়ে। ব্রিটেন ও এর ব্যতিক্রম নয়। এই অর্থনৈতিক টানাপোড়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ব্রিটিশ সরকার পূর্বের মত সামলাতে পারছিল না। যার ফলে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের;পরবর্তীতে বাংলাদেশের। এখন প্রশ্ন হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে কি উপমহাদেশ স্বাধীন হত? বাংলাদেশের জন্ম হত? হলেও কি ঘটনাক্রম একই থাকত?


২. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!

অবাক হলেও সত্যি যে, বাটারফ্লাই ইফেক্ট দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাতেও। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই যেত, যদি না শেষ মুহূর্তে সঠিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ না করা হত। সেই সময় এক বিশেষ ভুল বোঝাবুঝির জন্য সোভিয়েত সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চ করতে প্রস্তুত ছিল মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উদ্দেশ্যে। সোভিয়েন নিয়মের অনুসারে, সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চের জন্য ক্যাপ্টেন, পলিটিকাল অফিসার এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসারে- এই তিন পদস্থ প্রত্যেক ব্যাক্তির সম্মতির প্রয়োজন। কিন্তু বাকি দুইজন সম্মতি দিলেও সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসার সম্মতি দেন নি।


এখানে মনে রাখা দরকার, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই পারমানবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ ছিল। সে সময় এই দুই পরাশক্তি যুদ্ধে নেমে গেলে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার অনিবার্য ছিল। যার ফল হত ভয়াবহ। এমন কি পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন ও হতে পারত!
এভাবেই অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ আমাদের ভবিষ্যৎ এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে। 


এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর। তাই, পরবর্তীতে যদি কোন আকস্মিক ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটে, মনে রাখবেন তা নিছক ঘটনা নয়। কারো না কারো করা কোন কাজের ফলাফল!

Friday, February 1, 2019

দেজা ভ্যু: কি ও কেন (Déjà Vu :Bangla)

KNOWLEDGE MINE


(Déjà Vu :Bangla)

দেজা ভ্যু: কি ও কেন?

ধরুন, আপনি প্রথমবার ঘুরতে গিয়েছেন নিউইয়র্ক এ স্বপরিবারে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ ই থমকে দাঁড়ালেন। আপনার মনে হচ্ছে এই স্থানে আপনি আগেও এসেছেন। বেশ অনেক কিছুই আপনার পরিচিত মনে হচ্ছে। বাস্তবে যা কখনোই সম্ভব নয়। কারন, আপনি সেখানে আগে কখনোই যান নি। তাহলে, এমন কেন হল? কারন টা কি?
বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের দাবি যে, তারা কখনো বা কখনো এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, প্রথম বার কোন কাজ করা সত্ত্বেও তাদের মনে হচ্ছে যে এমন আগেও ঘটেছে তাদের সাথে। এ ঘটনাকেই বলে দেজা ভ্যু (Déjà vu)
নামকরণ:
দেজা ভ্যু বা Déjà vu একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। যার বাংলা অর্থ আগে থেকে দেখা। দেজা ভ্যু বলতে এমন অভিজ্ঞতা থাকা কে বুঝায় যা প্রকৃতপক্ষে কখনো অনুভব ই করা হয় না। সবচেয়ে পরিচিত রহস্যজনক অভিজ্ঞতা হল দেজা ভ্যু। অনেকেই এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় কিন্তু হয়ত এ ঘটনার নাম যে “দেজা ভ্যু” তা জানে না।
কারন:
দেজা ভ্যু এর কোন যুক্তিযুক্ত কারন বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নি। এটি সবচেয়ে পরিচিত ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলোর একটি। তবুও কিছু কিছু দল বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কারণের উল্লেখ করেছেন। যদিও কোন কারণ ই পরীক্ষিত নয় এবং শতভাগ নিশ্চিত নয়।

১. Familiarity Based Recognition
(পরিচিতি ভিত্তিক স্বীকৃতি)

©medicalnewstoday.com
বিজ্ঞানীদের দেয়া অন্যতম তত্ত্ব এটি। এই তত্ত্বানুসারে, আমরা যখন কোন নতুন কিছু দেখি বা নতুন স্থানে যাই,  আমাদের মস্তিষ্ক এর স্মৃতিতে থাকা তথ্যের সাথে বর্তমানে চোখ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলনা করে। যখন ই বর্তমানে পাওয়া তথ্য এবং স্মৃতি থেকে পাওয়া তথ্য মিলে যায়,  আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সংকেত দেয় যে জিনিসটি বা স্থানটি আমাদের পরিচিত।
যেমন, যখন আমরা কোন স্মার্টফোন দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক তার স্মৃতিতে থাকা তথ্যের সাথে তা তুলনা করে এবং আমাদের নির্দেশ দেয় যে আমরা বস্তুটিকে চিনি। সেই সাথে স্মার্টফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য স্মৃতি থেকে পর্যালোচনা করে।
কিন্তু কখনো যদি এ পদ্ধতিতে কোন সমস্যা হয় তখন ই হয় দেজা ভ্যু। যেমন, ধরুন আপনি কোন পার্কে গেলেন প্রথম বারের মত। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে গাছ,লেক ইত্যাদি থাকবেই। তো এই তত্ত্বানুসারে আপনি সেখানে ১ম বার গেলে বরাবরের মতই মস্তিষ্ক তার স্মৃতিতে এ সংক্রান্ত তথ্য খুজতে থাকে। সে তথ্যের সাথে বর্তমানে প্রাপ্ত কোন তথ্যের আংশিক মিল পেলেও আপনার মস্তিষ্ক নানা কারনে তাকে পূর্বপরিচিত হিসেবে গন্য করতে পারে। সে সময় ই আপনার মনে হবে হে স্থানটি আপনার পরিচিত এবং এখানে আপনি আগেও এসেছেন বা একই অভিজ্ঞতা আপনার পূর্বেও হয়েছে।

২. The Hologram Theory
(হলোগ্রাম তত্ত্ব)

এ তত্ত্বানুসারে, আমাদের মস্তিষ্ক একটি ছোট অংশ থেকে স্মৃতি তৈরী করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোন ঘটনা ঘটার সময় আমরা ঘটনাটির দৃশ্য, শব্দ ও ঘ্রান গ্রহন করলাম। অর্থাৎ অই ঘটনার সাথে এই তিনটি অভিজ্ঞতা সম্পৃক্ত। এখন যদি এই কাছাকাছি কোন ঘটনা ঘটে যেখানে আমরা শুধু ঘ্রান বা শব্দানুভূতি গ্রহন করলাম; সেখানেও আমাদের মস্তিষ্ক অপর অনুভূতি গ্রহন না করেই একে পূর্বানুভূতির সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারে। অর্থাৎ, অপর একটি অনুভূতি নিজে থেকেই তৈরী করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারে। ফলশ্রুতিতে আমাদের মনে হবে একই অভিজ্ঞতা আমাদের পূর্বেও হয়েছে যার অর্থ হল দেজা ভ্যু
এছাড়াও আরো অসংখ্য তত্ত্ব আছে এই দেজা ভ্যু সম্পর্কে। কোনটিই শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত নয়।
প্রায় প্রত্যেকেই কখনো না কখনো দেজা ভ্যু এর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। কিন্তু এ অভিজ্ঞতা খুব কমই ঘটে। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো সাথে এই দেজা ভ্যু মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
কিছু কিছু বহুল প্রচলিত বিষয়ে বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিত নয়। তার একটি হল দেজা ভ্যু। মানব অভিজ্ঞতার এ অন্যতম রহস্য অসংখ্য প্রশ্ন তৈরী করে। আর এ ধরনের অনেক প্রশ্নের আলোকে মানু্ষের করা খোজ ই এগিয়ে নিয়ে যায় আমাদের জ্ঞানশক্তিকে।