Saturday, April 13, 2019

হালো ইফেক্ট (The Halo Effect in Bangla)

The Halo Effect

হালো ইফেক্ট

 

হালো ইফেক্ট (Halo Effect)এর দ্বারা আমরা প্রত্যেকেই প্রভাবিত হই,হচ্ছি। কিন্তু এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect)টি কি? কেন ই বা হালো ইফেক্ট (Halo Effect) হয়?
কিভাবে আমাদের হালো ইফেক্ট প্রভাবিত করে? আজ আলোচনা হবে এসব নিয়েই !

আপনার কি কখনো কাউকে দেখে মনে হয়েছে যে, “লোকটা খারাপ”? বা “লোকটার নজর ভাল না”? বা কখনো কাউকে কোন কারন ছাড়াই অসহ্য মনে হয়েছে? কারন ছাড়াই কাউকে ভাল, ভদ্র মনে হয়েছে?

তাহলে, আপনিও বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের মত হালো ইফেক্ট (Halo Effect) প্রত্যক্ষ করেছেন!

হালো ইফেক্ট কি?

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) বুঝানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল একটি ইংরেজী বাক্য দিয়ে বলা। সেটি হল, “Judging a book by its cover”. আমরা যে প্রবাদ টার সাথে পরিচিত সেটি হল, “Don't judge a book by its cover”. অর্থাৎ, বাহিরের আবরণের উপর কোন কিছুকে যাচাই করা উচিত নয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত সচেতন বা অবচেতন মনে আমরা এ কাজ টি করেই যাই।

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) মূলত হল, কোন ব্যাক্তিকে তার স্বরূপ (Appearance) বা ব্যাক্তিটি দেখতে কেমন, তা দিয়ে যাচাই করা। অর্থাৎ, কারো সম্পর্কে না জেনে বা বুঝে তার সম্পর্কে একটি মতামত দিয়ে ফেলা/ তৈরী করে ফেলা। অন্যভাবে বলা যায় এটি এক ধরনের যুক্তিহীন ধারনা (cognitive bias) কোন ব্যক্তি সম্পর্কে।

হালো ইফেক্ট এর কারন

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) এর কারন হল কোন ব্যক্তির চেহারা বা তার নিজেকে উপস্থাপন করার উপায় (Appearance) আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। অন্য সব বিষয় অই ব্যক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক মতামত তৈরীতে গৌণ ভূমিকা রাখ। আমাদের মনস্তত্ত্ব (Phycology) অনুসারে মানুষের চেহারা বা চলাফেরা (Appearance) আমাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সচরাচর সুশ্রী, সুন্দর পোষাক পরিহিত ব্যক্তিদের আমরা বুদ্ধিমান, ভদ্র, আকর্ষণীয় ভাবি। একইভাবে, অপেক্ষাকৃত কম সুশ্রী, সাধারন পোষাক পরিহিত মানুষদের আমরা একই ভাবে বুদ্ধিমান বা আকর্ষণীয় বোধ করি না। আরো বলা যায়, যাদের আমাদের দেখে ভাল বা আকর্ষণীয় মনে হয়, আমরা ভেবে নেই যে মানুষটি সামাজিক বা মিশুক হবে। যদিও ঐ ব্যক্তির সাথে আমাদের পরিচয় হয় নি। 

আর এ বিষয়গুলো যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। ছোটবেলায় আমরা যে গল্প শুনতাম সব গুলোতেই রাজা বা নায়কদের সুশ্রী, আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হত। একই ভাবে ভিলেন বা দুশ্চরিত্রগুলোকে কুশ্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হত। এভাবেই যুগ যুগ ধরে আমাদের মনে অবচেতন ভাবে ধারনা তৈরী হয়েছে সুশ্রী ও কুশ্রী মানুষ সম্পর্কে।

হালো ইফেক্ট এর ইতিহাস

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) সর্বপ্রথম এডওয়ার্ড থ্রন্ডাইক (Edward Thorndike) ১৯২০ সালে প্রদান করেন। পেশায় তিনি একজন সাইকোলজিস্ট (মনস্তত্ত্বিক)। তিনি সে সময় ২ জন অফিসারকে তাদের সৈন্যদের যাচাই করতে বলেন। সৈন্যদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ভাবে যাচাই করতে বলা হয়। সেই সাথে শর্ত ছিল যে সৈন্যদের সাথে কথা না বলে যাচাই করতে হবে। 

ফল পাওয়া যায় যে, যেসব সৈন্য লম্বা এবং সুশ্রী ছিল তাদের বুদ্ধিমান, চরিত্রবান ও ভাল দলপতি হিসেবে মূল্যয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ, শুধু আপনি দেখতে কেমন, বা মানুষের কাছে আপনি কিভাবে উপস্থাপিত হচ্ছেন তার উপর ই মানুষ অনেক কিছু ভেবে নেয়। 
Halo Effect, Halo Effect in Bangla
Halo Effect


হালো ইফেক্ট এর ব্যবহার

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) এর অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবহার হল রাজনীতি তে। ছবি, বিলবোর্ড এ নেতাদের হাসোজ্জ্বল ছবি আমাদের মাঝে তাদের দৃঢ় নেতৃত্বের বোধ জাগ্রত করে। এছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বা সিনেমায় অভিনয়শিল্পী বা মডেলদের বিভিন্ন কাজ ও সেই পন্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা উদ্রেক করে।

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) এর অনেক খারাপ দিক ও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ অন্য ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা পোষণ করে ফেলে কোন কারন ছাড়াই। এছাড়া এই মনস্তত্ত্ব ব্যবহার করেই ঠগ,বাটপার রা মানুষকে প্রভাবিত করে তাদের সাথে প্রতারনা করে থাকে।

হালো ইফেক্ট এর প্রভাব

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষকেরা ছাত্রদের দেখেই তাদের সম্পর্কে একটি ধারনা করে ফেলেন। ছাত্ররাও শিক্ষকদের পোষাক, চালচলন দিয়ে শিক্ষক দের যাচাই করে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের এই ধারনা ছাত্রদের পরীক্ষার ফলেও কিছুটা প্রভাব ফেলে। গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে আসামীর চেহারা, ব্যবহার (Appearance) বিচারকের বিচারের উপর ও প্রভাব ফেলে নানা ভাবে!!

Halo Effect, Halo Effect in bangla
Halo Effect


এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect) অত্যন্ত প্রভাবশালী আমাদের জীবনে। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, “First impression is the last impression”- অর্থাৎ প্রথম সাক্ষাতেই যদি আমরা নিজেদের ভাল হিসেবে উপস্থাপন না করতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সে ধারনা পরিবর্তন করা অনেক কষ্টসাধ্য। জীবনে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই এই হালো ইফেক্টের প্রভাব দেখা যায়। প্রেম-ভালবাসায়, কোন পন্য কিনার সময়, কোন খাবার খাওয়ার সময় ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই!

হালো ইফেক্ট (Halo Effect) এর আরেকটি উদাহরন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যখন কোন পরিদর্শক কারো কাজ পরিদর্শন করে, তখন এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ধরুন, আপনি সেই কোম্পানির উন্নতিতে অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু সেই পরিদর্শনের দিন কোন কারনে আপনি সেই কর্মনিষ্ঠা দেখাতে পারেননি; পরিদর্শকের আপনাকে কর্মনিষ্ঠ মনে হয় নি। অথচ অন্য কোন ব্যক্তিকে হয়ত সেই পরিদর্শকের কর্মনিষ্ঠ মনে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রমোশন বা পদোন্নতি আপনি পাবেন না। সেই আপাতভাবে মনে হওয়া কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিই পদোন্নতি পাবেন। নির্মম হলে এটিই সত্য।
একই কথা প্রযোজ্য নতুন চাকরি সন্ধানরত মানুষদের ক্ষেত্রে। হাজার হাজার চাকরি দরখাস্তের মধ্যে আপনার দরখাস্ত যদি আপনাকে বাকিদের চেয়ে ভাল বা বুদ্ধিমান হিসেবে না উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে সেই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সমান যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক ব্যক্তির মধ্যে একজনকে বাছাই করার ক্ষেত্রেও এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect) কাজ করে।

বিভিন্ন গবেষণায় আরো জানা যায়, এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect) শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই কাজ করে না। বিভিন্ন ব্র‍্যান্ড বা কোম্পানির ক্ষেত্রেও কাজ করে। যেমন আমরা বিভিন্ন সময় কোন খাবারের দোকানের ডেকোরেশন বা সাজ সজ্জা দেখেই চলে যাই সেখানে। অনেক খাবার শুধু দেখতে আকর্ষণীয় দেখেই কিনে খাই। অনেক জুতা, ব্যাগ, টি-শার্ট কিনি শুধুমাত্র তা কোন বিশেষ ব্যান্ডের বলে। অনেক ক্ষেত্রে নানান পন্য ক্রয় করি শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব সে পন্যের পন্যদূত বলে। এর কারন হল সেই হালো ইফেক্ট (Halo Effect)। আমরা ভাবি যে সেই অভিনেতা পন্যটির প্রচার করছে তাই পন্যটি ভাল ই হবে। সেই ছবি বা ব্র‍্যান্ড ইমেজ যা সেই কোম্পানিটি তৈরি করেছে। আমরা পারতপক্ষে সেই পন্যের জন্য মূল্য প্রদান করছি না; সেই ব্র‍্যান্ডের নাম বা ছবির জন্য করছি। 

Halo effect, Halo Effect in Bangla
Halo Effect

 এখন আমাদের করণী কি? আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। তাই নিজেকে সকলের কাছে আকর্ষণীয় ও বন্ধুসুলভ ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তাহলেই আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে পারব। চাকরি/ ব্যবসা প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজেকে যোগ্য, সেরা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। 

আরো মাথায় রাখতে হবে যে কাউকে তার বাহ্যিক যোগ্যতায় বিবেচনা করা যাবে না। নিজের সহকর্মী বা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা কাজের যোগ্যতা কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারন যোগ্যতর ব্যক্তিরাই সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে। কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সাধারন ভাবে থাকা (casual) ব্যক্তিরা অধিক কর্মঠ ও যোগ্যতর হয়। তারা সকল ক্ষেত্রে ভাল ফল করে থাকে সচরাচর। এর কারন হল এসকল ব্যক্তিদের তাদের যে তথাকথিত বাহ্যিক অযোগ্যতা অতিক্রম করতে হয় জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এ কারনেই তাদের ভাল কর্মযোগ্যতা দেখা যায়। 

মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যয়ন করায় শ্রেয়। একই ভাবে পন্যকে পন্য হিসেবেই মূল্যয়ন করা উচিত। কোন পন্য ক্রয়ের আগে অন্যদের মতামত (review) নেয়া উচিত। মানুষকে তাদের কর্মযোগ্যতা দিয়ে যাচাই করা উচিত। কাউকে তাদের ধর্ম, বর্ণ, চেহারা ইত্যাদি দিয়ে যাচাই করা উচিত নয়।
মানুষ মানেই সেরা জীব তখন ই সম্ভব যখন আমরা নিজেদের ইন্দ্রিয়কে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারব। এই হালো ইফেক্ট (Halo Effect) অনেক ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে কাজ করলেও সর্বদা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করা বা যাচাই করাই শ্রেয়।

Wednesday, March 6, 2019

এজেন্ডা ২১ (Agenda 21) : ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য

এজেন্ডা ২১ (Agenda 21) : ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য

এজেন্ডা ২১ (Agenda 21)  কি? ইলুমিনাতির সাথে এর সম্পর্ক আছে কি? এজেন্ডা ২১ (Agenda 21) ও ডিপপুলেশন এজেন্ডা কি একই? এসব নিয়েই থাকছে নিম্নোক্ত আলোচনা।
এজেন্ডা ২১ নামে জাতিসংঘের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। যাকে অনেকে  ডিপপুলশন এজেন্ডা বা জনসংখ্যা নিরোধন এর সাথেও মিলিয়ে দেখে!

এজেন্ডা ২১ আসলে কি?

 এজেন্ডা ২১ হল একটি প্রোগ্রাম যা জাতিসংঘ বাস্তবায়ন করতে চায়। এর উদ্দেশ্য রয়েছে কিছু। যেমন,  ১. নিয়ন্ত্রন (its about control). অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের মানুষদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা। তারা কি করছে, দেখছে বা কি করবে সবকিছু নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা। এটি এজেন্ডা ২১ ও New World Order উভয়ের নীতি। ২. ভূমি, সম্পদ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন (control over land, resources and population control)।এখানে সরকারি ও ব্যক্তিগত ভূমি, সম্পদ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তিমালিকানায় থাকা জমিও এর অন্তর্গত। সম্পদ বলতে প্রাকৃতিক সম্পদের কথা বলা হয়েছে। অনেকের মতে এখানে বায়ু, পানি, খনিজ সম্পদ সবকিছুই নিয়ন্ত্রনের কথা বলা হয়েছে।
এজেন্ডা ২১ এর উদ্দেশ্য হিসেবে অনেক কিছুই বলা রয়েছে। যেখানে রয়েছে ব্যক্তিগত ঘর বিলোপ করে শরহকেন্দ্রিক আবাসন ঘরে তোলা। অর্থাৎ একটি ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট দেয়া হবে সবাইকে। আর এসব স্থানে নিয়ন্ত্রন থাকবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের। যার অর্থ, ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রন করা হবে।  এছাড়া শুল্ক বা ট্যাক্স বাড়ানো, সেই সাথে কঠোর আইন প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ ও এজেন্ডা ২১ এর উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে। এছাড়া সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল জনসংখ্যা হ্রাস করা।
 
এ অনুসারে জাতিসংঘ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বা নিয়ম অনুসারে বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করতে চাচ্ছে। জাতিসংঘের মত বিশ্বে মানুষের সংখ্যা বেশি। এত মানুষের “প্রয়োজন” নেই বিশ্বে। এসব মানুষ বরং বিশ্বের ক্ষতি করছে। এসব “অপ্রয়োজনীয়” নবায়ন অযোগ্য সম্পদ যেমন অক্সিজেন পেট্রোল ইত্যাদি নষ্ট করছে।  এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন মানুষদের এ বিশ্বে প্রয়োজন নেই? ধনীদের? না গরীবদের?
CNN এর প্রতিষ্ঠাতা, মিলিয়নেয়ার টেড টারনার (Ted Turner)  নিজের একাধিক সাক্ষাতকার বা বক্তৃতা তে বৈশ্বিক উষ্ণতার (Global Warming) জন্য অধিক জনসখ্যা কে দায়ি করেছেন। তার মতে বেশি মানুষ বেশি সম্পদ ব্যবহার করছে! মানুষ কম হলে কম সম্পদ ব্যবহৃত হবে। যার ফলস্বরূপ বৈশ্বিক উষ্ণতা হবে না!
এমন কি রিক ওয়াল্টম্যান (Rick Oltman)। যিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, তিনিও জনসংখ্যা কমানোর কথা বলেছেন। উনি মনে করেন এত জনসংখ্যা মানুষের জীবন মান কমিয়ে দিয়েছে।অনেকের মতে এজেন্ডা ২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৯৫ শতাংশ জনসংখ্যা হ্রাস করা হবে।
এদের একজন হলেন ডাক্তার ইমা লেবো (Dr Rima E Laibow. Medical Durector, Natural Solutions Foundation). উনি এক বক্তৃতাতে এ সংক্রান্ত তথ্য দেন। উনি বলেন ২০০২ সালে উনারা একটি “Advance Medical Pracctice” করছিলেন। যেখানে বিশ্বের অনেক উচ্চ পদস্থ (হাই প্রোফাইল) লোক আসতেন তাদের কাছে। তখন নাম প্রকাশ না করে এক মহিলার কথা বলেন যিনি একজন রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। অই মহিলা তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।অই মহিলা তাকে বলেছিলেন যে সময় এসে গেছে অপ্রয়োজনীয় মানুষদের মেরে ফেলা। বর্তমান বিশ্বের শুধু ৫-১০ শতাংশ মানুষদের শুধু প্রয়োজন। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ বিশ্বের অধিকাংশ নবায়ন অযোগ্য সম্পদ ধ্বংস করছে যার উপর বাকি ১০ শতাংশের অধিকার। এমনকি মার্কিন রাজনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার ও ডিপপুলেশন এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
agenda-21, agenda-21-bangla
Hennry Kissinger-Agenda 21

এখন প্রশ্ন হল এই ডিপপুলেশন বা জনসংখ্যা হ্রাস হবে কিভাবে? এখানে ২ টি উপায় রয়েছে। এগুলো হল,          ১. খাদ্যের মাধ্যমে ২. স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে
এখন যখনি স্বাস্থ্যসেবা ও এজেন্ডা ২১ এর প্রসঙ্গ আসে, চলে আসে বিল গেটস এর নাম।
বিল গেটস বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এটা হয়ত আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটা হয়ত অনেকেই জানি না যে, ২০১১ সালে বিল গেটস একটি পোলিও টিকা ক্যাম্পেইন চালান। যার কারনে প্রায় ৪৭০০০ শিশু আক্রান্ত হয় এবং অনেক শিশু মারাও যায়। বিল গেটস এর উপর ৩০০০০ শিশুর ওপর বেআইনি ভাবে টিকার পরীক্ষন করার অভিযোগ ও রয়েছে।  প্রশ্ন হলো বিল গেটস এসব কেন করছেন?
এর সম্ভাব্য কারন অনেকের মতে, তিনি নিজেও এজেন্ডা ২১ এর সাথে জড়িত!
agenda-21, agenda-21-Bangla
Bill Gates Agenda-21

আমরা অনেকেই জানি বিল গেটসের নিজস্ব একটি সংস্থা রয়েছে। যার নাম মিলেন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন  (Melinda Gates Foundation). এই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন রোগের টিকা বানায় এবং তাদের পরীক্ষন করে। এমন একটি পরীক্ষনের জন্যই তাদের বিভিন্ন বার আদালতেও যেতে হয়। বিল গেটস ডিপপুলেশন বা জনসংখ্যা হ্রাসের নীতিতে বিশ্বাসি। উনার টেড টক্স (Ted Talks) এর একটি বক্তৃতা চলাকালীন সময় তিনি একমাত্র জনসংখ্যা কে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ি করেন। আর এর প্রতিকারের একমাত্র উপায় হিসেবে জনসংখ্যা কমানোর কথা বলেন।

অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে বড় কারন হল কল-কারখানা বা মটর যান থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড। এই নীতিতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মতে কল-কারখানা বা মোটরযান নয়, একমাত্র মানুষ ই বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ি।  বিল গেটস সেই বক্তৃতা তে ভ্যাক্সিন বা টিকা তৈরী করে জনসংখ্যা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন। এমনকি বিল গেটস নিজেও বিভিন্ন সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে তাদের বানানো ভ্যাক্সিন বা টিকা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসে কাজ করছে। যদিও কোথাও তিনি ভ্যাক্সিনের মাধ্যমের শিশুদের হত্যার কথা বলেন নি।
এভাবে বিল গেটস ও এজেন্ডা ২১ এর বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারনা! এখন এজেন্ডা ২১ কে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল ২০২০/২০২১ সাল নাগাদ। কিন্তু তা সম্ভন হবে না বিধায় ২০৩০ সাল নাগাদ পরিকল্পনা টি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। আর এর নাম দেয়া হয়েছে এজেন্ডা ২০৩০
কি? মনে হচ্ছে কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক? মনে হচ্ছে এমন কোন পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভন নয়? তাহলে ইন্টারনেটে খুজে দেখতে পারেন। সার্চ করুন “agenda 2030 Babgladesh” যে অফিসিয়াল পেজটি পাবেন সেখাটি খুললেই দেখতে পাবেন এজেন্ডা ২০৩০ এর উদ্দেশ্য গুলি। টাইলস আকারে লেখা প্রতিটি লক্ষ্যের সাথে একটি চিত্র বা লোগো আকা আছে। যার অনেক গুলোই হল ইলুমিনাতির প্রচলিত লোগো বা চিহ্ন সমূহের অনুরূপ। চিহ্নগুলো হলো চোখ, সূর্য সহ আরো অনেক কিছু।
agenda-21, agenda-21-bangla

এভাবে এজেন্ডা ২১ বা এজেন্ডা ২০৩০ যে ইলুমিনাতির নতুন বিশ্বক্রম (New World Order) বাস্তবায়ন এর অংশ- তা অনেকেই বিশ্বাস করে।
এখন প্রাকৃতিক কারন ছাড়া মানুষ বা জনসখ্যা কমানোর আর কি কি উপায় হতে পারে তা ভাবার দায়িত্ব আপনাদের উপর ই ছেড়ে দিচ্ছি। আরো উদ্দেশ্য রয়েছে যা নিমোক্ত লিংক গুলোতে গিয়ে দেখতে পারেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য ছিল নতুন বিশ্বক্রম (New World Order) প্রতিষ্ঠা। যেখানে বিশ্বের সব ক্ষমতা কিছুসংখ্যা মানুষের উপর থাকার কথা বলা হয়। আর ডিপপুলেশন বা জনসংখ্যা হ্রাসের কথা বলা হয়েছে। এখন সাদৃশ্যের বিষয় হল যে, বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব দ্বারা নানা ভাবে উপরোক্ত দুটি বিষয়ের ই উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ইলুমিনাতির অস্তিত্ব এখনো প্রশ্নবিদ্ধ, তবুও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রভাবশালী মানুষদের ইলুমিনাতির সদস্য হওয়ার প্রশ্ন উঠেছে। যদিও কেউ ই ইলুমিনাতির অস্তিত্ব প্রমান করতে পারে না; ইলুমিমাতির নিশ্চিহ্ন হওয়াও প্রমাণিত নয়।
এখন প্রশ্ন হল বিশ্বনেতারা কি আসলেই জনসংখ্যা হ্রাস করতে চান? মানুষ হত্যা ছাড়া তা কি আদৌ সম্ভব? এসব প্রশ্ন হয়ত প্রশ্নই রয়ে যাবে।




(উপরোক্ত লেখা লেখকের মস্তিষ্ক প্রসূত নয়। সকল তথ্য ইন্টারনেটে প্রাপ্ত জার্নাল, প্রামাণ্যচিত্র, ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে সহায়ক লিংক থেকে তথ্য যাচাই করে নেয়া যেতে পারে)



সহায়ক লিংক: Bill Gates on Ted Talks- https://www.youtube.com/watch?v=WUJMR3BUm2s
                         Dr. Rima Laibow- https://www.youtube.com/watch?v=mxLWZ…
  

Tuesday, February 26, 2019

ইলুমিনাতি কি? (What is Illuminati)

ইলুমিনাতি কি?

(What is Illuminati?)

"ইলুমিনাতি" হলে অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি সংঘটন যার সংশ্লিষ্টতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রহস্যজনক বিষয়ে দাবী করা হয়েছে।

ইলুমিনাতি কথাটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। মূলত বিভিন্ন conspiracy theory বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে এই সংঘঠনটির সম্পৃক্ততা ধারনা করা হয়। এই সংঘটনটি মূলত লুসিফার (Lucifer),  শয়তান/দৈত্য (Satan) এর অনুগত। উল্লেখ্য, এই সকল নাম বা তথ্যই খ্রিষ্টীয় পুরানের সাথে সম্পৃক্ত।

অনেকের মতে, যে সব ব্যক্তি বা তারকারা খুব কম সময়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন, তারা ইলুমিনাতির সদস্য। ইলুমিনাতির সদস্য হওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের আত্নাকে শয়তানকে সমর্পিত করা! এছাড়া আরো নানা রহস্যকর তথ্য প্রচলিত রয়েছে ইলুমিনাতি সম্পর্কে।

কিভাবে শুরু

১ মে ১৭৭৬ ব্যাভেরিয়া (Bavaria)জার্মানি।

এডাম উইশপ্ট (Adam Weishaupt) একটি গুপ্ত সমাজ বা Secret Society বানান যার উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তিবাদী চিন্তার মঞ্চ তৈরী করা। যার নাম ছিল The Order of Illuminati। মানুষ ভাবত এই সমাজের সদস্যরা বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী (Enlightened) যাদের উদ্দেশ্য ছিল নতুন ক্রমের বিশ্ব (New World Order) তৈরি করা। যাতে তারা পৃথিবীতে শাসন করতে পারে। 


ইলুমিনাতি স্থাপনের বেশ কিছু উদ্দেশ্য ছিল।


সেই সাথে বিভিন্ন দর্শন ও ছিল ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠার পিছে।


কথিত আছে তারা এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে কোন পর্যায়ে যেতে পারত। হোক না কালোজাদু (Black magic) বা অন্য কোন অনৈতিক পন্থা। এরা বিশ্ব শাসন করতে চেয়েছিল কিন্তু সব কাজ অত্যন্ত লুকিয়ে (Secretly) করত।
তাদের যে প্রতীক রয়েছে, তাতে একটি চোখ দেখা যায়।  যা লুসিফার (Lucifer) এর চোখ নামে কথিত।


উল্লেখ্য লুসিফার হল শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত। ইলুমিনাতি এর সদস্য রা বিশ্বাস করে লুসিফার বিশ্বে চলমান সবকিছু দেখছে। কিন্তু কিছু সময় পর চার্লস থিওডর (Charles Theodore) যিনি নতুন শাসক ছিলেন তিনি ১৭৮৫ সালে এই গুপ্ত সমাজ (Secret Society) কে বন্ধ করে দেন। কারন তিনি তৎকালীন ইলুমিনাতি এর জনপ্রিয়তা দেখে চিন্তিত ছিলেন। উনার আশংকা ছিল এই ইলুমিনাতি এর জনপ্রিয়তা পরবর্তীতে যেন উনার শাসনের উৎখাতের কারন না হয়ে যায়।

এরপর এই গ্রুপের কি হল কেউ জানে না। সেই সময় প্রায় ২০০০ মানুষ এই গ্রুপের সদস্য ছিল। উৎখাতের পর হঠাৎ এই মানুষগুলোর কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।
এরপর ই ধারনা করা হয় এই মানুষগুলো বেচে আছে এবং বংশ পরম্পরায় ইলুমিনাতি -র আদর্শ বয়ে নিচ্ছে।

১৯২০ এর দশকে ফ্যাসিবাদীরা বিশ্বাস করতে যে ইহুদী দের একটি দল বা গ্রুপ হল ইলুমিনাতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কমিউনিজমের এর বিরোধীরা বিশ্বাস করত যে কমিউনিস্ট দের একটি দল হল ইলুমিনাতি।আর বর্তমানে ইলুমিনাতি বিষয়ক ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা (Illuminati Conspiracy Theorists) বিশ্বাস করে যে, ইলুমিনাতিরা New World Order এর অংশ!  

অনেকের মতে ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য হল One World Order প্রতিষ্ঠা। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী একটি মাত্র সরকার সচল থাকবে। বর্তমানে যেমন একেক দেশে একেক সরকার- এমন না হয়ে সমগ্র বিশ্ব এক ও অভিন্ন সরকারের অন্তর্গত হবে। যা হল New World Order এর মূলকথা। জর্জ এইচ ডব্লু বুশ, জন এফ কেনেডি প্রমুখের মত অনেক বিশ্বপরিচিত ও ক্ষমতাধর ব্যাক্তিরা অনেক বার New World Order কথাটি উচ্চারন করেছেন।

অনেক Conspiracy Theory অনুসারে বিশ্বের সব শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সকলেই ইলুমিনাতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেই সাথে অনেক ব্যাখ্যাতীত ঘটনার পিছেও ইলুমিনাতির যোগসূত্র সন্দেহ করা হয়।

এছাড়া অনেক তারকা অভিনেতা বা গায়কদের ও ইলুমিনাতির অনুসারী বলে ধরা হয়। এটি মূলত তাদের পোষাক এবং বিভিন্ন সময় তাদের দেখানো চিহ্ন দিয়ে ধারবা করা হয়। হাত দিয়ে ত্রিভুজ দেখানোকে প্রথাগতভাবে ইলুমিনাতির প্রতীকের পিরামিড ভাবা হয়।


যদিও ইলুমিনাতির অস্তিত্ব বর্তমানে আছে কিনা এ সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে। সে সাথে রয়েছে আরো অনেক রহস্যজনক ঘটনা যেখানে অনেকেই ইলুমিনাতির সম্পৃক্ততা দাবী করে। এরকম কিছুই থাকছে পরবর্তী ব্লগ গুলোতে।

Sunday, February 24, 2019

প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect in Bangla)

প্লাসিবো ইফেক্ট

Placebo Effect in Bangla

মানব মস্তিষ্কের অন্যতম বিভ্রান্তিকর আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফলে এমন ঘটনা ঘটে যা পারতপক্ষে অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু এই প্লাসিবো ইফেক্ট আসলে কি?

প্লাসিবো ইফেক্ট কি


প্লাসিবো ইফেক্ট হল একটি ঘটনা যা এখনো সম্পূর্ণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নি। যখন কোন বাহ্যিক বা ভৌত কারন ছাড়া শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে কোন বিশেষ শারীরিক ঘটনা ঘটে তখন তাকে প্লাসিবো ইফেক্ট ঘটে। কি? বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? এই লেখার পরবর্তী অংশগুলোতে বুঝতে পারবেন।

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট সবচেয়ে বিষ্ময়কর সৃষ্টি হল মানুষ। আর মানুষের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মস্তিষ্ক। এই জলজ্যান্ত সুপার কম্পিউটার টি আমাদের দেহ তথা সমগ্র কিছু নিয়ন্ত্রন করছে। অথচ এই মস্তিষ্ক যে কত বিষ্ময়কর তা আমরা জানিই না। এমনকি হয়ত আমরা জানিও না যে মস্তিষ্কের কতটুকু অংশ আমরা ব্যবহার করছি!
মস্তিষ্কের এক অদ্ভুত আচরন হল প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect)। এ বিষয়ে  ডা.জো ডিসপেঞ্জার  (Dr. Joe Dispenza)এর লেখা “ইউ আর দ্য প্লাসিবো” ("You Are the PLACEBO") একটি বই রয়েছে। এখানে তিনি সুন্দরভাবে প্লাসিবো ইফেক্ট এর ফল ব্যাখ্যা করেছেন।


২১ বছর বয়সে লেখকের এক দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ভেঙে যায়। অনেক ডাক্তার দেখানোর পর ও সব ডাক্তার ই উনাকে জানান যে বাকি জীবন লেখককে হুইলচেয়ার নিয়ে চলতে হবে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না। তিনি সর্বদাই মনে মনে ভাবতেন যে উনার কিছুই হয় নি; দুর্ঘটনার কোন প্রভাব পরে নি উনার উপর। এভাবে দীর্ঘদিন ভাবতে ভাবতে তিনি লক্ষ্য করেন যে উনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এবং ক্রমেই তিনি পূর্বের মত সুস্থ হয়ে উঠেন! যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক রহস্য!
এখন কথা হল যে, তিনি কিভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন? উপরের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের শরীরের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কে দেহের মনোজাগতিক অবস্থা প্রভাবিত করে। এই প্রভাব ই হল প্লাসিবো ইফেক্ট। এরকম প্রভাব আর তার ফল আরো পরিলক্ষিত হয়েছে পূর্বে!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে অনেক মার্কিন সৈন্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাই চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার করতে হত অনেকের ই। সে সময় এত অস্ত্রোপচার করতে হত যে এক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার এ ব্যবহৃত এনেস্থিসিয়ার (চেতনানাশক) অভাব দেখা দিল। তখন অস্ত্রোপচার না করলে সেনাসদস্য মারা যেতে পারতেন। এ অবস্থায় ডাক্তারেরা ইঞ্জেকশনে পানি ভরে তা রোগীদের দেহে ব্যবহার করতে থাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে। কিন্তু সৈন্যেরা তো ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া ই দেয়া হচ্ছে! কিন্তু বিষ্ময়করভাবে দেখা গেল, সে ব্যবহৃত পানিই আহতদের গায়ে এনেস্থেসিয়ার মত কাজ করল!

এখন এটি কিভাবে হল?
আহত সকলে ভাবছিলেন যে তাদের এনেস্থেসিয়া দেয়া হয়েছে। তাই তাদের মস্তিষ্ক সংকেত পাঠায় দেহকে যে এখন অবশ হয়ে যেতে হবে। যার কারনে সে পানিই এনেস্থেসিয়ার কাজ করছে! অর্থাৎ আমরা যদি কোন জিনিস বিশ্বাস করত্র পারি, তাহলে আমরা সে অনুসারে কাজও করতে পারি।
অর্থাৎ, যদি আমরা সর্বদা আশাবাদী ভাবনা মাথায় রাখি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখি তাহলে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বেড়ে যায়। আর যদি সর্বদা হতাশাবাদী হয়ে থাকি, ব্যর্থতা নিয়ে ভাবি আমাদের মনস্তত্ত্ব সে ক্ষেত্রে ভাল ফলের প্রচেষ্টা নাও করতে পারে।
ঠিক যেমন সার্কাসের হাতি। সচরাচর সার্কাসে ব্যবহারের জন্য বাচ্চা হাতি নিয়ে আসা হয়। পরে এটি বড় হলে তখনও ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বাচ্চা হাতিকে লোহার শিকলের সাহায্যে বেধে রাখা হয় যাতে এটি পালিয়ে না যায়। আর চেষ্টা করলেও হাতিটি পালাতে পারে না কারন শিকল তার চেয়ে শক্ত। কিন্তু এই হাতিই বড় হয়ে গেলেও সেই একই শিকল সে ভাঙতে পারে না। কারন হল এই প্লাসিবো ইফেক্ট

সে সারা জীবন ভেবে আসছে যে এই শিকল ভাঙা সম্ভব নয়। তাই বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠলেও শিকল ভাঙা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অথচ বিশালাকার হাতির শক্তির সামনে সেই শিকল কিছুই না।
এভাবেই বিশ্বাস ও মনস্তাত্ত্বিক জোরে আমরা অনেক অসাধ্য ও সাধন করতে পারি। তেমন ই অনেক সহজ কাজ ও হাতছাড়া করতে পারি। তাই নিজের উপর বিশ্বাস ও লক্ষ্যে নজর রেখে তা অর্জনের চেষ্টাই এনে দিতে পারে সফলতা।

Monday, February 18, 2019

বাটারফ্লাই ইফেক্ট (Butterfly Effect in Bangla)

বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect)


আপনি কি জানেন, যে আপনি ভেনিজুয়েলা তে বসবাসরত নিকোলাস মাদুরোর সাথে সম্পর্কযুক্ত? অথবা, ব্রাজিলের নেইমারের পার্ফরমেন্স এর উপর আপনার বাবার প্রভাব রয়েছে?
আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। উপরের ঘটনাগুলো কাল্পনিক। কিন্তু এ কথা ১০০ ভাগ সত্য যে এই পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের কাজ দ্বারা কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত। এই তত্ত্বটি হলো, “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা “Theory of Chaos” , যার একটি ফল হল  বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect). 


এই তত্ত্বটির ভিত্তি হল: যে কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ, কোন ঘটনার শেষ পরিনতিকে বা ফলাফলকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করতে পারে। “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা “Theory of Chaos” নিয়ে ১৮৮০-র দশকে প্রথম কোন ধারনা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন মার্কিন গণিতবিদ এডওয়ার্ড নর্টন লরেঞ্জ (Edward Norton Lorenz).



উনি গাণিতিকভাবে দেখান যে, বিশ্বের যে কোন তরঙ্গকে সামান্য পরিবর্তন করা হলে সেই পরিবর্তন বিশ্বের অন্য সকল তরঙ্গ কে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করে। এ বিষয়টি তরঙ্গের উপরিপাতন (Superposition of wave) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন যে, ব্রাজিলে কোন প্রজাপতি পাখা ঝাপটালে তার ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে হারিকেন হতে পারে! তিনি প্রকৃতভাবে বোঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন ক্ষুদ্র কাজের পরিণতি অনেক বড়ও হতে পারে।




বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ছোট ছোট বা আপাতভাবে গুরুত্বহীন মনে হওয়া কাজ ও কোন ফলাফলকে বিশেষভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে।


১. ভুল দয়া (Wrong Mercy)


বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর সবচয়ে জনপ্রিয় উদাহরন এটি। ২৮ সেপ্টেম্বর,১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সেদিন জার্মানি ও ব্রিটেনের মুখোমুখি যুদ্ধের এক পর্যায়ে হেনরি টেন্ডেন নামের এক ব্রিটিশ সেনার বন্দুকের নিশানায় এক আহত জার্মান সৈনিক এসে পড়ে। হেনরি চাইলে সেই সৈন্যকে গুলি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি দয়া করেন সেই সৈন্যের উপর। সেই দয়াগ্রস্থ সৈন্যটিকে আজ আমরা এডলফ হিটলার নামে জানি! সেই ব্রিটিশ সৈন্য সেদিন দয়া না দেখালে কি হত কেউ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি হত? পারমানবিক বোমা কি আবিষ্কার হত? কোন প্রশ্নের ই উত্তর পাওয়া যায় না, যাবেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই পুরো বিশ্বে অনেক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়ে। ব্রিটেন ও এর ব্যতিক্রম নয়। এই অর্থনৈতিক টানাপোড়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ব্রিটিশ সরকার পূর্বের মত সামলাতে পারছিল না। যার ফলে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের;পরবর্তীতে বাংলাদেশের। এখন প্রশ্ন হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে কি উপমহাদেশ স্বাধীন হত? বাংলাদেশের জন্ম হত? হলেও কি ঘটনাক্রম একই থাকত?


২. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!

অবাক হলেও সত্যি যে, বাটারফ্লাই ইফেক্ট দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাতেও। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই যেত, যদি না শেষ মুহূর্তে সঠিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ না করা হত। সেই সময় এক বিশেষ ভুল বোঝাবুঝির জন্য সোভিয়েত সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চ করতে প্রস্তুত ছিল মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উদ্দেশ্যে। সোভিয়েন নিয়মের অনুসারে, সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চের জন্য ক্যাপ্টেন, পলিটিকাল অফিসার এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসারে- এই তিন পদস্থ প্রত্যেক ব্যাক্তির সম্মতির প্রয়োজন। কিন্তু বাকি দুইজন সম্মতি দিলেও সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসার সম্মতি দেন নি।


এখানে মনে রাখা দরকার, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই পারমানবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ ছিল। সে সময় এই দুই পরাশক্তি যুদ্ধে নেমে গেলে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার অনিবার্য ছিল। যার ফল হত ভয়াবহ। এমন কি পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন ও হতে পারত!
এভাবেই অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ আমাদের ভবিষ্যৎ এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে। 


এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর। তাই, পরবর্তীতে যদি কোন আকস্মিক ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটে, মনে রাখবেন তা নিছক ঘটনা নয়। কারো না কারো করা কোন কাজের ফলাফল!

Friday, February 1, 2019

দেজা ভ্যু: কি ও কেন (Déjà Vu :Bangla)

KNOWLEDGE MINE


(Déjà Vu :Bangla)

দেজা ভ্যু: কি ও কেন?

ধরুন, আপনি প্রথমবার ঘুরতে গিয়েছেন নিউইয়র্ক এ স্বপরিবারে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ ই থমকে দাঁড়ালেন। আপনার মনে হচ্ছে এই স্থানে আপনি আগেও এসেছেন। বেশ অনেক কিছুই আপনার পরিচিত মনে হচ্ছে। বাস্তবে যা কখনোই সম্ভব নয়। কারন, আপনি সেখানে আগে কখনোই যান নি। তাহলে, এমন কেন হল? কারন টা কি?
বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের দাবি যে, তারা কখনো বা কখনো এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, প্রথম বার কোন কাজ করা সত্ত্বেও তাদের মনে হচ্ছে যে এমন আগেও ঘটেছে তাদের সাথে। এ ঘটনাকেই বলে দেজা ভ্যু (Déjà vu)
নামকরণ:
দেজা ভ্যু বা Déjà vu একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। যার বাংলা অর্থ আগে থেকে দেখা। দেজা ভ্যু বলতে এমন অভিজ্ঞতা থাকা কে বুঝায় যা প্রকৃতপক্ষে কখনো অনুভব ই করা হয় না। সবচেয়ে পরিচিত রহস্যজনক অভিজ্ঞতা হল দেজা ভ্যু। অনেকেই এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় কিন্তু হয়ত এ ঘটনার নাম যে “দেজা ভ্যু” তা জানে না।
কারন:
দেজা ভ্যু এর কোন যুক্তিযুক্ত কারন বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নি। এটি সবচেয়ে পরিচিত ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলোর একটি। তবুও কিছু কিছু দল বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কারণের উল্লেখ করেছেন। যদিও কোন কারণ ই পরীক্ষিত নয় এবং শতভাগ নিশ্চিত নয়।

১. Familiarity Based Recognition
(পরিচিতি ভিত্তিক স্বীকৃতি)

©medicalnewstoday.com
বিজ্ঞানীদের দেয়া অন্যতম তত্ত্ব এটি। এই তত্ত্বানুসারে, আমরা যখন কোন নতুন কিছু দেখি বা নতুন স্থানে যাই,  আমাদের মস্তিষ্ক এর স্মৃতিতে থাকা তথ্যের সাথে বর্তমানে চোখ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলনা করে। যখন ই বর্তমানে পাওয়া তথ্য এবং স্মৃতি থেকে পাওয়া তথ্য মিলে যায়,  আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সংকেত দেয় যে জিনিসটি বা স্থানটি আমাদের পরিচিত।
যেমন, যখন আমরা কোন স্মার্টফোন দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক তার স্মৃতিতে থাকা তথ্যের সাথে তা তুলনা করে এবং আমাদের নির্দেশ দেয় যে আমরা বস্তুটিকে চিনি। সেই সাথে স্মার্টফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য স্মৃতি থেকে পর্যালোচনা করে।
কিন্তু কখনো যদি এ পদ্ধতিতে কোন সমস্যা হয় তখন ই হয় দেজা ভ্যু। যেমন, ধরুন আপনি কোন পার্কে গেলেন প্রথম বারের মত। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে গাছ,লেক ইত্যাদি থাকবেই। তো এই তত্ত্বানুসারে আপনি সেখানে ১ম বার গেলে বরাবরের মতই মস্তিষ্ক তার স্মৃতিতে এ সংক্রান্ত তথ্য খুজতে থাকে। সে তথ্যের সাথে বর্তমানে প্রাপ্ত কোন তথ্যের আংশিক মিল পেলেও আপনার মস্তিষ্ক নানা কারনে তাকে পূর্বপরিচিত হিসেবে গন্য করতে পারে। সে সময় ই আপনার মনে হবে হে স্থানটি আপনার পরিচিত এবং এখানে আপনি আগেও এসেছেন বা একই অভিজ্ঞতা আপনার পূর্বেও হয়েছে।

২. The Hologram Theory
(হলোগ্রাম তত্ত্ব)

এ তত্ত্বানুসারে, আমাদের মস্তিষ্ক একটি ছোট অংশ থেকে স্মৃতি তৈরী করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোন ঘটনা ঘটার সময় আমরা ঘটনাটির দৃশ্য, শব্দ ও ঘ্রান গ্রহন করলাম। অর্থাৎ অই ঘটনার সাথে এই তিনটি অভিজ্ঞতা সম্পৃক্ত। এখন যদি এই কাছাকাছি কোন ঘটনা ঘটে যেখানে আমরা শুধু ঘ্রান বা শব্দানুভূতি গ্রহন করলাম; সেখানেও আমাদের মস্তিষ্ক অপর অনুভূতি গ্রহন না করেই একে পূর্বানুভূতির সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারে। অর্থাৎ, অপর একটি অনুভূতি নিজে থেকেই তৈরী করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারে। ফলশ্রুতিতে আমাদের মনে হবে একই অভিজ্ঞতা আমাদের পূর্বেও হয়েছে যার অর্থ হল দেজা ভ্যু
এছাড়াও আরো অসংখ্য তত্ত্ব আছে এই দেজা ভ্যু সম্পর্কে। কোনটিই শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত নয়।
প্রায় প্রত্যেকেই কখনো না কখনো দেজা ভ্যু এর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। কিন্তু এ অভিজ্ঞতা খুব কমই ঘটে। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো সাথে এই দেজা ভ্যু মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
কিছু কিছু বহুল প্রচলিত বিষয়ে বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিত নয়। তার একটি হল দেজা ভ্যু। মানব অভিজ্ঞতার এ অন্যতম রহস্য অসংখ্য প্রশ্ন তৈরী করে। আর এ ধরনের অনেক প্রশ্নের আলোকে মানু্ষের করা খোজ ই এগিয়ে নিয়ে যায় আমাদের জ্ঞানশক্তিকে।  

Thursday, January 31, 2019

ম্যান্ডেলা ইফেক্ট (Mandela Effect in Bangla)

ম্যান্ডেলা ইফেক্ট: ইতিবৃত্ত 

(Mandela Effect: Bangla)

ভাবুন যে আপনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা করে পাঞ্জাবি পড়ে বের হয়েছেন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে। আপনি সহ হাজার হাজার মানুষ রমনা বটমূলে সমবেত হল। কিন্তু পরে জানতে পারলেন আসলে অইদিন পহেলা বৈশাখ ছিলই না। অর্থাৎ, শুধু আপনিই নন, হাজার হাজার মানুষ ই এই ভুলটি করেছিল।


উপরের ঘটনাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে এটিই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট। এবং এ ধরনের ঘটনা অনেক বার ঘটেছেও। এভাবেই আপনার স্মৃতিতে থাকা কোন ঘটনা কি হঠাৎ পাল্টে গেছে? শুধু আপনি না শত শত মানুষের কি একই স্মৃতিভ্রম হয়েছে?


যদি হয়ে থাকে, আপনি ম্যান্ডেলা ইফেক্ট এর প্রত্যক্ষকারী।
অহিংস আন্দোলনের অন্যতম সমাদৃত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ১৮ জুলাই, ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহন করেন। ৫ আগস্ট,১৯৫২ সালে তাকে জেলবন্দি করা হয় অহিংসাবাদী আন্দোলন এর জন্য। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বাস করেন যে ২৭ বছর জেলে থাকাকালীন অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অথচ ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি দক্ষিন আফ্রিকার ১ম কৃষ্ণাঙ প্রেসিন্ডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৫ ডিসেম্বর,২০১৩ সালে মারা যান।


অনেকের দাবী, তারা ১৯৮০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্য তে অংশগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব নেয়ার সময় ও কেউ এই মতিভ্রম এর কথা ব্যাক্ত করে নি। সকলেই ২০১৩ সালে এই মহান নেতার মৃত্যুর পর তাদের এই মতিভ্রমের কথা ব্যক্ত করে।
বলুন তো, আপনারা ছোট বেলা থেকে বিশ্বনন্দিন কার্টুন চরিত্র পিকাচুর কোন ছবিটি দেখে আসছেন?



যদি বলে থাকেন ডান পাশের টা, তাহলে অভিনন্দন!!! আপনিও আমিসহ অসংখ্য মানুষের মত ম্যান্ডেলা ইফেক্ট এর শিকার। কারন আজ পর্যন্ত পিকাচুর লেজে কালো রঙের কোন চিহ্ন ই ছিল না। অথচ আমি আপনি সহ অনেক মানুষ এতদিন ডান পাশের ছবিটিকেই আসল পিকাচু মনে করত।
আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন করা যাক। নিচের কোন লোগোটি আপনারা গাড়ী নির্মাতা কোম্পানি ফোর্ড এর বলে মনে করেন?




আপনি কি ফোর্ডের লোগোতে “F” এর একটি অংশ কি বাকানো দেখেছেন কখনো?
মোটামুটি ৫০ শতাংশ করে মানুষ উভয় ক্ষেত্রেই সহমত প্রকাশ করবে। কিন্তু সত্য কথা হল, কোন ক্ষেত্রেই ফোর্ড এর “F” এর অংশ সোজা ছিল না। সর্বদাই বাকা ছিল।
কিন্তু ফোর্ডের কারখানার একটি ছবিতে ২ টি অংশে এ ২ ধরনের লোগো ই দেখা যায়।




এমনকি কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ডের সাক্ষরেও কখনো “F” এর কোন অংশ বাকা ছিল না।




তাহলে কি অনেক আগে থেকেই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করছে?
এ ধরনের অসংখ্য মতিভ্রম সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু এসব কেন হয়? বিজ্ঞান কি বলে?
কিছু বিজ্ঞানীদের ধারনা ম্যান্ডেলা ইফেক্ট হয় কিছু পারিপার্শ্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারনে। অনেক সময় মস্তিষ্ক কিছু মেকি স্মৃতি (False memory) তৈরী করে। যার ফল এই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের কেন একই মেকি স্মৃতি হবে তা ব্যাখ্যাতীত।
আবার, কিছু বিজ্ঞানী দের ধারনা ম্যান্ডেলা ইফেক্ট এর কারন হল সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা Parallel Universe এর ফল। এ ধারনাটি হল: প্রতি Parallel Universe এ বেশিরভাগ ঘটনা যুগপৎ ঘটে। যার কিছু ব্যত্যয় হল এই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট। অন্য মহাবিশ্বে সেসব ঘটনা ঘটে যা আমরা মতিভ্রম হিসাবে চিহ্নিত করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত Parallel Universe এর অস্তিত্ব ই প্রমাণিত নয়। সেখানে এ যুক্তিও এখন পর্যন্ত গ্রহন যোগ্য নয়।
অনেক রকম ইফেক্ট (বাটারফ্লাই ইফেক্ট, দেজা ভ্যু) এর মধ্যে ম্যান্ডেলা ইফেক্ট ই সবচেয়ে বিষ্ময়কর এবং দুর্লভ।
এখন থেকে কখনো যদি আপনার এ ধরনের মতিভ্রম হয়ে থাকে, তাহলে চিন্তার কারন নেই আপনি একা নন। হতে পারে আপনার মত অনেকেই একই কথা ভাবে এবং বিশ্বাস করে।